উপরন্তু বছরের আট মাস সেখানে প্রচণ্ড গরম থকে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, মদ্যপান নিষিদ্ধ, নারী-পুরুষের মধ্যে প্রকাশ্যে মেলামেশার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ, এবং সবচেয়ে বড় কথা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেক দেশের মতই সৌদি আরবের মানবাধিকার রেকর্ড খুবই ভয়ঙ্কর।
তাহলে বিধিনিষেধে ভরা অত্যন্ত রক্ষণশীল এই দেশে মানুষ পয়সা খরচ করে যাবে কেন? দেখার কী আছে সেদেশে? বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, সৌদি আরবের নিসর্গের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য যে কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে - তা অনেক মানুষই হয়ত কল্পনাও করেন না।
এটা ঠিক দেশের সিংহভাগ এলাকাই মরুভূমি, কিন্তু সেদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে জুনিপার বৃক্ষে মোড়া আসির পর্বতমালা (৯,৯০০ ফুট উঁচু), নীলাভ জলের, কোরাল সমৃদ্ধ লোহিত সাগর, আল-হফুফের খেজুর গাছে ভরা মরূদ্যান এবং জেদ্দার সরু অলি-গলি আর মসলার বাজার।
ফ্রাঙ্ক গার্ডনার ১৯৮০র দশক থেকে পেশাগত কারণে বহুবার সৌদি আরব গেছেন, সেদেশের অধিকাংশ জায়গাতে তিনি ঘুরছেন। তার কথায়, "অনেক সৌদি মজা করে আমাকে বলে যে তাদের চাইতেও নাকি আমি সৌদি আরবকে অনেক বেশি দেখেছি।"
সৌদি আরবে তার প্রিয় এবং পছন্দের জায়গাগুলোর তালিকা করেছেন ফ্রাঙ্ক গার্ডনার-
বৈচিত্রপূর্ণ জেদ্দা
লোহিত সাগরের তীরে এই বন্দর শহর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজধানী ছিল। শহরটিতে লোহিত সাগর তীরবর্তী সমস্ত দেশের মানুষের বসবাস। ফলে সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ।
লোহিত সাগরের তীরে এই বন্দর শহর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজধানী ছিল। শহরটিতে লোহিত সাগর তীরবর্তী সমস্ত দেশের মানুষের বসবাস। ফলে সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ।
জেদ্দায় গেলে দেখবেন, মিশরীয়রা খোলা জায়গায় ক্যাফেতে বসে হয় কফিতে চুমুক দিচ্ছেন অথবা হুক্কা টানছেন। কেউ আবার রাস্তার লাইট পোস্টের নীচে বসে বোর্ড-গেমে মশগুল।
ইয়েমেনিদের টেইলরিং দোকান রয়েছে অনেক। দেখা যাবে সেসব দোকানে মেঝেতে বসে অনেক রাত পর্যন্ত তারা পোশাক সেলাই করছেন। জেদ্দার ফুটপাতে চোখে পড়বে হরেক রকম মসলা নিয়ে বসেছেন জিবুতি, এরিত্রিয়া এবং সোমালি নারীরা।
জেদ্দার পুরনো শহরের পাথরে তৈরি সরুর সরু গলিতে আরবির সাথে সাথে আকছার আপনার কানে আসবে ইথিওপিয়ার ভাষা থেকে শুরু করে হিন্দি শব্দ।
আসির পর্বতমালা
দশ-বিশ বছর সৌদি আরবে রয়েছেন এমন বহু মানুষের কাছেও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আসির পর্বতমালা অপরিচিত। সবুজ জুনিপার বৃক্ষে ঢাকা এই পর্বতের সৌন্দর্য খুবই বিচিত্র।
দশ-বিশ বছর সৌদি আরবে রয়েছেন এমন বহু মানুষের কাছেও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আসির পর্বতমালা অপরিচিত। সবুজ জুনিপার বৃক্ষে ঢাকা এই পর্বতের সৌন্দর্য খুবই বিচিত্র।
ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন এমনকী ভরা গ্রীষ্মে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেছেন ব্যাপক এক শিলা বৃষ্টির পর জুনিপারের জঙ্গল পুরো সাদা হয়ে গেছে। পাঁচ লাখের মত হামদ্রিয়াজ বেবুনের বসবাস এই পাহাড়ি জঙ্গলে। সেই সাথে রয়েছে হর্নবিল, ঈগল আর নীলচে আগামিড গিরগিটি।
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ পর্যটনের জন্য ইয়েমেন সীমান্তের কাছে এই জায়গাটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাহাড়ের ওপরে ওঠার জন্য কেবল কারের ব্যবস্থা হয়েছে। পাহাড়ের খাদে খাদে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর সব গ্রাম। সেখানে থেকে আসির পাহাড়ের ঢালের সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।
মাদা'ইন সালেহ
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমির মাঝে প্রাচীন নাবাতিয়ান সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। জর্ডানের পেত্রার বিভিন্ন নিদর্শনের সাথে মিল রয়েছে সেগুলোর।
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমির মাঝে প্রাচীন নাবাতিয়ান সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। জর্ডানের পেত্রার বিভিন্ন নিদর্শনের সাথে মিল রয়েছে সেগুলোর।
এটা হিযাজ, আরব উপদ্বীপের পশ্চিমাংশের সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে টি ই লরেন্স ১৯১৭ সালে তুর্কি শাসনের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহের সময় আরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। সেসময় তৈরি রেললাইনের অংশবিশেষ এখনো চোখে পড়বে।
মাদা’ইন সালেহ নিয়ে বহুদিন সৌদি সরকার খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ, ইসলাম-পূর্ব সভ্যতার এসব নিদর্শনের প্রচার রক্ষণশীলদের খুব একটা পছন্দের নয়। ঐ সময়কালকে তারা 'অন্ধকার যুগ' হিসাবে দেখেন।
কিন্তু পর্যটন শিল্পের প্রসার নিয়ে যখন সৌদি আরব এখন ভাবতে শুরু করেছে। ফলে, ইসলাম-পূর্ব প্রাচীন সভ্যতার এসব নিদর্শন নিয়েও প্রচার শুরু হয়েছে।
আল হফুফ
সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে মরুভূমির মাঝে খেজুর গাছে আবৃত আদিগন্ত মরূদ্যান বিশ্বের সবচেয়ে বড়। বাগানের মধ্যে এখানে সেখানে সরু ঝরনা চোখে পড়ে। এর মাঝে রয়েছে আল-কুরা পর্বত এবং তার ভেতর জটিল গুহা-পথ। ২০১৮ সালে এটি ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এলাকার তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে মরুভূমির মাঝে খেজুর গাছে আবৃত আদিগন্ত মরূদ্যান বিশ্বের সবচেয়ে বড়। বাগানের মধ্যে এখানে সেখানে সরু ঝরনা চোখে পড়ে। এর মাঝে রয়েছে আল-কুরা পর্বত এবং তার ভেতর জটিল গুহা-পথ। ২০১৮ সালে এটি ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এলাকার তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
পাহাড় পেয়ে এই গুহায় ঢুকলে বাইরের মরুভূমির উত্তাপ থেকে সাথে সাথে মুক্তি। ঠাণ্ডা হয়ে যায় শরীর।
কিছু সাবধানতা
সৌদিরা সাধারণত বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানায়। তবে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। উদার পশ্চিমা সংস্কৃতির অনেক কিছুই রক্ষণশীল এই দেশে তীব্র আপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে।
সৌদিরা সাধারণত বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানায়। তবে কিছু ঝুঁকি রয়েছে। উদার পশ্চিমা সংস্কৃতির অনেক কিছুই রক্ষণশীল এই দেশে তীব্র আপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে।
রাস্তা-ঘাটে কখনই সৌদি নারীদের ছবি তোলার চেষ্টা করা উচিৎ হবেনা। তাদের অভিভাবকরা এটাকে মর্যাদাহানি হিসাবে দেখতে পারেন।
এখনও রিয়াদ, জেদ্দা সহ বড় বড় শহরের বাইরে বহু সৌদি হয়ত কখনই পশ্চিমাদের সংস্পর্শেই আসেনি। সুতরাং পশ্চিমারা ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন বের করলে তারা সন্দিহান হয়ে উঠতে পারেন।
সুতরাং স্থানীয়দের ছবি তোলার সময় সাবধানী হতে হবে। তাদের অনুমতি চাইতে হবে।
কীভাবে যাওযা যাবে
৪৯টি দেশের নাগরিকরা অনলাইনে ভিসা পেতে পারেন। মুখ না ঢাকতে হলেও, মেয়েদের 'শালীন' পোশাক পরতে হবে। এই প্রথম অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসাথে হোটেল রুমে থাকার অনুমতি পাবেন।
৪৯টি দেশের নাগরিকরা অনলাইনে ভিসা পেতে পারেন। মুখ না ঢাকতে হলেও, মেয়েদের 'শালীন' পোশাক পরতে হবে। এই প্রথম অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসাথে হোটেল রুমে থাকার অনুমতি পাবেন।
কতটা নিরাপদ
এমন নয় যে এবারই প্রথম সৌদি আরব পর্যটন বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০০০ সালে পর্যটকদের রক-ক্লাইম্বিং এবং প্যারা-গ্লাইডিং এ সাহায্য করতে তারা ফ্রান্স থেকে প্রশিক্ষক নিয়ে এসেছিল।
এমন নয় যে এবারই প্রথম সৌদি আরব পর্যটন বিস্তারের চেষ্টা করছে। ২০০০ সালে পর্যটকদের রক-ক্লাইম্বিং এবং প্যারা-গ্লাইডিং এ সাহায্য করতে তারা ফ্রান্স থেকে প্রশিক্ষক নিয়ে এসেছিল।
কিন্তু ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা এবং তার সাথে ১৫ জন সৌদির সংশ্লিষ্টতার পর সেই চেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সৌদি আরবকে আল কায়েদার বিদ্রোহ সামলাতে হয়েছে। এখন ইয়েমেনের যুদ্ধে জড়িয়েছে তারা যার পরিণতিতে মাঝে মাঝেই ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছে।
তারপরও সৌদি আরব নিরাপদ একটি দেশ। পর্যটকদের সেখানে অপরাধ বা সহিংসতার মুখোমুখি হবে - সে সম্ভাবনা খুবই কম। বিবিসি বাংলা।-দিগন্ত অনলাইন
Comments
Post a Comment